হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে ৫৭০ কৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
শৈশব ও কৈশোর কাল:
ততকালীন আরবের রীতি ছিল যে তারা মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ দেহ এবং সুঠাম গড়ন তৈরির জন্য জন্মের পরপরই দুধ পান করানোর কাজে নিয়োজিত বেদুইন মহিলাদের কাছে দিয়ে দিতেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফেরত নিতেন। এই রীতি অনুসারে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে হালিমা বিনতে আবু জুয়াইবের (অপর নাম হালিমা সাদিয়া) হাতে দিয়ে দেওয়া হয়। এই শিশুকে ঘরে আনার পর দেখা যায় হালিমার সচ্ছলতা ফিরে আসে এবং তারা শিশুপুত্রকে সঠিকভাবে লালন-পালন করতে সমর্থ হন।
তখনকার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা: শিশু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কেবল হালিমার একটি স্তনই পান করতেন এবং অপরটি অপর দুধভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন। দুই বছর লালন-পালনের পর হালিমা শিশু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু! এর পরপরই মক্কায় মহামারী দেখা দেয় এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে হালিমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। হালিমাও চাচ্ছিলেন শিশুটিকে ফিরে পেতে। এতে তার আশা পূর্ণ হল।
ছয় বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি মায়ের সাথে কাটান। এই সময় একদিন আমিনার ইচ্ছা হয় ছেলেকে নিযে মদীনায় যাবেন। সম্ভবত কোন আত্মীয়ের সাথে দেখা করা এবং স্বামীর কবর জিয়ারত করাই এর কারণ ছিল। আমিনা, ছেলে, শ্বশুর এবং দাসী উম্মে আয়মনকে নিয়ে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদীনায় পৌঁছেন। তিনি মদীনায় একমাস সময় অতিবাহিত করেন। একমাস পর মক্কায় ফেরার পথে আরওয়া নামক স্থানে এসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মোত্তালেব শিশু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে মক্কায় পৌঁছেন। এরপর থেকে দাদাই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দেখাশোনা করতেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন তখন তার দাদাও মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দায়িত্ব দিয়ে যান।
আবু তালিব ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আরবদের নিয়ম অনুযায়ী বছরে একবার সিরিয়া সফরে যেতেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স যখন ১২ বছর তখন তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলেন। প্রগাঢ় মমতার কারণে আবু তালিব আর নিষেধ করতে পারলেন না। যাত্রাপথে বসরা পৌঁছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাঁবু ফেললেন। সে সময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী বসরা অনেক দিক দিয়ে সেরা ছিল। কথিত আছে, শহরটিতে জারজিস সামে এক খ্রিস্টান পাদ্রী ছিলেন। যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি তার গীর্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন। এ সময় তিনি বালক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে দেখে শেষ নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন। ফুজ্জারের যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন নবী (সাঃ) এর বয়স ১৫ বছর। এই যুদ্ধে তিনি স্বয়ং অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের নির্মমতায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হন। কিন্তু! তাঁর কিছু করার ছিলনা। সে সময় থেকেই তিনি কিছু একটি করার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন।

0 Comments