Recents in Beach

হযরত উমর ফারুক (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনি


হযরত উমর (রাঃ) বা উমর ইবনুল খাত্তাব ৫৮০ খৃস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ৩ নভেম্বর, ৬৪৪ খৃস্টাব্দে মৃত্যু বরণ করেন। তিনি সচরাচর হযরত উমর (রাঃ) নামে অভিহিত, ইসলাম ধর্মের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ঘনিষ্ঠ সাহাবী।

তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কুরাইশ গোত্রের বনু আদি সম্প্রদায়ে তাঁর জন্ম। তিনি উমর আল ফারুক নামেও পরিচিত। ‘ফারুক’ অর্থ সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। তিনি খুলাফায়ে রাশেদীন এর দ্বিতীয় খলিফা হলেও শিয়া সম্প্রদায় তাঁকে ইসলামের খলিফা হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা প্রদান করে না।

ট্রেলার:
পূর্ননাম: উমর ইবনুল খাত্তাব।
পিতা: খাত্তাব ইবনে নুফাইল।
রাজত্বকাল: ৬৩৪-৬৪৪ খৃস্টাব্দ।
সমাধিস্থল: মসজিদে নববী।
পূর্বসূরি: আবু বকর (রাঃ)।
উত্তরসূরি: উসমান (রাঃ)।
পেশা: ব্যবসায়ী।
মৃত্যু: নভেম্বর ৩, ৬৪৪ খৃস্টাব্দ।
সমাধিস্থল: মসজিদে নববী।

প্রাথমিক জীবন:
উমর (রাঃ) বর্তমান সৌদি আরবের মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খাত্তাব ইবনে নুফাইল। তাদের পরিবার মূলত মধ্যবর্তী ধরনের ছিল। তিনি শিক্ষিত ছিলেন যা তখনকার আরব সমাজে অনেকটাই ব্যতিক্রম ছিল এবং শিক্ষিতদের অন্যরকম সম্মান ছিল। সুস্বাস্থ্য, শক্তিশালী, সাহসী এবং বিশেষ করে রাগী পুরুষ হিসেবেও তিনি সুপরিচিত ছিলেন।

যৌবনকালে একজন প্রথম শ্রেণীর কুস্তীগীর হিসেবে প্রখ্যাত ছিলেন। তখনকার আমলে মদ পান আরবে খুবই সাধারণ বিষয় ছিল এবং অনেকের বর্ণনামতে উমর ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মদ পান করতেন। কিন্তু! ইসলাম গ্রহণের পর তিনি কখনও মদ্য স্পর্শ করেননি।

ইসলাম গ্রহণ:
মুহাম্মদ (সাঃ) যখন প্রথম ইসলামের বাণী প্রচার করেন তখন উমর তাঁর তীব্র বিরোধিতা করেন এবং কুরাইশদের প্রথাগত ধর্ম রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ইসলাম বিরোধী হিসেবে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। ইবনে ইসহাকের সীরাত গ্রন্থ অনুসারে উমর ‘মুহাম্মদ’ (সাঃ) কে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং একদিন সে উদ্দেশ্যেই মুক্ত তরবারী হাতে ঘর থেকে বের হন।

পথিমধ্যে তিনি একজনের সাক্ষাৎ লাভ করেন, যিনি ইতোমধ্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। সেই ব্যক্তি তাঁকে নবীকে হত্যার পূর্বে প্রথমে নিজের ঘর সামলানোর জন্য বলেন। তাঁর কাছে উমর জানতে পারেন তাঁর বোন ফাতিমা এবং ভগ্নীপতি ইসলাম গ্রহণ করেছ।

অগত্যা তিনি বোনের বাড়িতে যান এবং বোন ও ভগ্নীপতিকে কুরআন পাঠরত অবস্থায় দেখেন। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ভগ্নীপতিকে মারধর করেন। ফাতিমা তাঁর স্বামীকে রক্ষা করতে এলে তাকেও আঘাতের শিকার হতে হয়। প্রচণ্ডভাবে আহত হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা কেউই ইসলাম ত্যাগ করতে সম্মত হন নি।

বোনের শরীরে রক্ত দেখে তিনি শান্ত হন এবং তাঁরা যা পাঠ করছিলো তা দেখতে চান। পবিত্র হয়ে কুরআনের একটি আয়াত তিনি পাঠ করেন। আয়াতটি ছিল সূরা ত্বা-হা’র অংশ। সেই আয়তটি তাঁকে এতই অভিভূত করে যে তিনি সেদিনই মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে যেয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর ইসলাম প্রসারে তিনি ততটাই ভূমিকা রেখেছিলেন, গ্রহণের পূর্বে ইসলামের বিরুদ্ধে যতটা ভূমিকা রাখতেন।

আল ফারুক উপাধি:
হযরত ওমর (রাঃ) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেই রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বর্তমানে মুসলমানের সংখ্যা কত? 
তখন, রাসূল (সাঃ) উত্তর দিলেন, “তোমাকে নিয়ে ৪০ (চল্লিশ) জন।”

হযরত উমর (রাঃ) বললেন, “এটাই যথেষ্ট। আজ থেকে আমরা এই চল্লিশ জনই কাবা গৃহে গিয়ে প্রকাশ্যে মহান আল্লাহ তা-আলার ইবাদাত করবো। ভরসা মহান আল্লাহর। অসত্যের ভয়ে আর সত্যকে চাপা পড়ে থাকতে দেব না।”

রাসূল (সাঃ) হযরত উমর (রাঃ) এর এই সদিচ্ছার উপর খুশি মনে অনুমতি দিলেন। হযরত উমর (রাঃ) সবাইকে নিয়ে তরবারি হাতে “আল্লাহু আকবার” ধ্বনি দিতে দিতে কাবা প্রাঙ্গণে গিয়ে উপস্থিত হলেন। মুসলিম দলের সাথে হযরত ‍ওমর (রাঃ) কে এভাবে কাবা প্রাঙ্গণে দেখে উপস্থিত কাফের কুরাইশগন বিস্মিত ও মনোক্ষুন্ন হয়ে পড়লেন।

তাদের মনোভাব দেখে হযরত উমর (রাঃ) বজ্রকণ্ঠে গর্জন করে বললেন, “আমি তোমাদের সাবধান করে দিচ্ছি, কোন মুসলমানকে স্পর্শ করলে ওমরের তরবারি তোমাদের বিরুদ্ধে উত্তোলিত হবে।”

কাবায় উপস্থিত একজন কুরাইশ সাহস করে বললেন, “হে খাত্তাব পুত্র ওমর! তুমি কি সত্যিই মুসলমান হয়ে গেলে?

আরবরা তো কখনো প্রতিজ্ঞাচ্যুত হয় না। জানতে পারি কি, তুমি কোন জিনিস পেয়ে এমনভাবে প্রতিজ্ঞাচ্যুত হলে?

হযরত উমর (রাঃ) উচ্চকন্ঠে জবাব দিলেন, “মানুষ যার চেয়ে বেশি পাওয়ার কল্পনা করতে পারে না, আমি আজ তেমন জিনিস পেয়ে প্রতিজ্ঞাচ্যুত হয়েছি। সেই জিনিসটি হল আল কুরআন।” হযরত উমর (রাঃ) এর এরূপ তেজোদীপ্ত কথা শুনে আর কেউ-ই কোন কথা বলতে সাহস পেল না। বিমর্ষ চিত্তে কাফের কুরাইশগণ সবাই সেখানে (কাবা প্রঙ্গণ) থেকে চলে গেল। অতঃপর রাসূল (সাঃ) সবাইকে নিযে কাবা ঘরে নামায আদায় করলেন

সেখানে মুসলমানদের এটাই প্রথম নামায। এর আগে মুসলমানরা অতি গোপনে ধর্ম কর্ম পালন করতেন। পোশাক-পরিচ্ছদের পার্থক্যও রক্ষা করতে পারতেন না। এজন্য , কে মুসলমান, কে পৌত্তলিক তা চেনার উপায় ছিল না। এ ঘটনার পর মুসলমানরা পোশাক-পরিচ্ছদ ও ধর্ম কর্মে পৃথক জাতিরূপে পরিগণিত হলেন। এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন উপলক্ষে রাসূল (সাঃ) হযরত উমর (রাঃ) কে “আল ফারুক” বা সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী উপাধিতে ভূষিত করলেন।

উমর (রাঃ) এর শাসন ব্যবস্থা:
দুই বছর তিন মাস সুচারুভাবে খিলাফতকার্য সম্পাদন করে হযরত আবু বকর (রাঃ) ইন্তেকাল করলে হযরত উমর ফারুক (রাঃ) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা নির্বাচত হন। খেলাফত লাভ করে তিনি রাজ্য বিস্তার এবং সাম্যবাদী চিন্তা-চেতনায়, এবং গরিব সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামের আলোকে আত্মনিয়োগ করেন। আজনাদীন যুদ্ধ, দামেস্ক, ফাহল সমর, শ্যাম ও হামস বিজয়, জাজিরা, খুজস্তান, হামদান, স্পেহান, কেরমান, চিন্তাম, মাকান, খোরাসান, মিসর, ইয়ারমুক যুদ্ধ, বায়তুল মোকাদ্দাস, ইরাক ও কাদেসিয়ার মহাসমর তাঁর যুদ্ধ জয়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং কাদিসিয়ার যুদ্ধের বিজয় সংবাদ নিয়ে যে সংবাদ বাহক উটে আরোহণ করে মদিনায় এসেছিলেন, অর্ধ পৃথিবীর মহান খলিফা হয়েও তিনি উটে আরোহণ করেননি বরং উটের রশি ধরে হেঁটে হেঁটে উটচালককে সাহায্য করেছিলেন। হযরত উমর ফারুক (রাঃ) এর এই সহমর্মিতা, সহানুভূতি, বদান্যতা প্রজারঞ্জনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর খিলাফত কাল পর্যন্ত মূলত কোনো রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে হযরত উমর ফারুক (রাঃ) ই প্রথম মুসলিম সাম্রাজ্য স্থাপন করে ইসলামের অনুশাসন বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেন। হযরত উমর ফারুক (রাঃ) নিজের সম্পর্কে বলেছিলেন, আমি রাজা নই, আমি আল্লাহ সুবহানাহু তা-আলার দাস, তোমাদের সেবক, প্রজাপুঞ্জের সমবেত পরামর্শ ব্যতীত খিলাফত চলতে পারে না। তাই তিনি বিশাল সাম্রাজ্যের শাসনপ্রণালী সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করতে কার্যনির্বাহ সভা বা মজলিসে শুরা গঠন করেন।

এ সভায় হযরত উসমান (রাঃ), হযরত আলী (রাঃ), হযরত আবদুর রহমান বিন্ আওফ (রাঃ), হযরত মায়াজ বিন জাবাল (রাঃ), হযরত উবাই ইবনে কাব (রাঃ) সদস্য ছিলেন। দৈনন্দিন যেকোনো ব্যাপারে এ সভা ডাকা হতো এবং অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাধারণ সভায় বিশেষ অধিবেশনও বসত। প্রজাকুলের অধিকার, সাম্রাজ্যের বিভক্তিকরণ, উপযুক্ত শাসক নিয়োগ, সেনাবাহিনী গঠন এবং রাজকর আদায়ের যে সুষ্ঠ নীতি তিনি গ্রহণ করেছিলেন, তা অদ্যাবধি ইসলামের ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

আইন ও বিচার ক্ষেত্রে হযরত উমর (রাঃ) এর দক্ষতা ইসলামে সাম্যতা ও ন্যায়পরায়ণতা এনেছে। তিনি ইসলামের মহান কল্যাণে দাসপ্রথা উঠিয়ে দেন এবং প্রজাকুলের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সংরক্ষিত করেন। জিম্মির অধিকার, জান-মাল, ধর্ম ও বর্ণশাস্ত্র নিরাপদ রাখার ঘোষণাও তিনি করেন। প্রজাকুলের ব্যক্তিগত সব ক্ষেত্রে চলমান জীবন সুন্দরতম পরিচালনায় হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর অবদান অবিস্মরণীয় এবং ইসলামের সুবহে সাদিকের লগ্নে তাঁর উদারনৈতিক চিন্তা-চেতনা, দূরদর্শিতা বিশ্ববাসীর কাছে পাথেয় হয়ে থাকবে।

হযরত উমর ফারুক (রাঃ) এর জীবনযাত্রা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন ছিল মাসিক মাত্র ১৩০ টাকার সরকারি ভাতা। তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সামান্য আহার গ্রহণ করতেন। এগুলো মোটা আটার রুটি, গোশত ও জয়তুন ছাড়া আর কিছুই নয়। অর্থাৎ পৃথিবীর মহান খলিফা হয়েও তিনি খেজুর পাতার মসজিদ ঘরে বসে বিশাল সাম্রাজ্য পরিচালনা করেছেন এবং প্রহরীবিহীন সাদামাটা ঘরে দিনযাপন করতেন।

হযরত উমর (রাঃ) ছিলেন ইসলামের সরলতা, সততা, সহনশীলতা, ত্যাগ, নিষ্ঠা, দয়া-দাক্ষিণ্য, সাহস ও বিক্রম, আমল-আখলাক এবং বিচার ও বিচক্ষণতার মূর্তপ্রতীক। মানবিক আল-আশারায় উল্লেখ আছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আমার পরে কেউ নবী হলে সেটা হতো উমর, সুবহানাল্লাহ! কত বড় মর্যাদা-সম্মানের আসনে তিনি। মূলত ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা, গরিব সাধারণ জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশা মোচনে এবং সাম্যবাদী মন-মননে বাস্তব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করাই ছিল হযরত ওমর (রাঃ) এর আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

উমর (রাঃ) এর বিখ্যাত কিছু উক্তি:
১) তোমাদের শাসক হিসেবে আমি হলাম সে ব্যক্তির মত, যেমন কিছু লোক একত্রে সফর করার সময় টাকা-পয়সাগুলো একজনের হাতে জমা দিয়ে বলে যে-তোমাকে আমাদের প্রয়োজনাদি মেটানোর দায়িত্ব দেওয়া হলো। দায়িত্বপ্রাপ্ত সে ব্যক্তির কি খরচের ব্যাপারে তারতম্য করার সুযোগ আছে? তেমনি খিলাফতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও কারও প্রতি তারতম্য করার অধিকার আমার নেই।

২) আল্লাহর শপথ করে বলছি- আমি বাদশাহ নই যে, জনগনকে গোলাম বানিয়ে রাখব। আমি আল্লাহর একজন বান্দা মাত্র। আমাকে শাসনকারর্য পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পন করা হয়েছে। এটি আমানত, আমার দায়িত্ব হল জনগনের সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। যদি এ দায়িত্ব ঠিকমত পালন করতে পারি, তবেই আমার কৃতকার্যতা। আর যদি আমি শাসন কর্তৃত্বকে নিজের ইচ্ছাধীন করে নিই এবং জনগনকে তাদের প্রয়োজনের জন্য আমার পেছনে হাঁটাহাঁটি করতে বাধ্য করি, তবে আমার ফলশ্রুতি হবে জঘণ্য।

৩) দূরবর্তী নদীতীরে চর্মরোগগ্রস্ত একটি ছাগী যদি মালিশ করার মত একটু তেলের অভাবে কষ্ট পায়, তবে হাশরের দিন সে সম্পর্কেও রাষ্ট্রপ্রধানকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

৪) কোন ব্যক্তি যদি ‍ ‍ঋণ পরিশোধ করতে অপারগ হয়ে পড়ে, তবে সে ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব সরকারী কোষাগারকে বহন করতে হবে।

৫) বাকিতে ক্রয় করে যে পোষ্যপালন করেছে, সে ব্যক্তি যদি ধনবান ও অপরাধী না হয়ে থাকে, তবে তার সে ধার সরকারী কোষাগার থেকে পরিশোধ করে দাও।

৬) কারও কোন প্রয়োজন থাকলে আমার কাছে এসো। আল্লাহ আমাকে তোমাদের সকলের কোষাগারের রক্ষক ও বণ্টনকারী বানিয়েছেন।

৭) রাষ্ট্রের কোষাগারে যা আছে, তা জনগনের আমানত এবং তাদের কল্যানের জন্যই সঞ্চিত। যে পর্যন্ত জনগণের প্রয়োজন পূর্ণ না হবে, সে পর্যন্ত আমাদেরকে খরচ করতে হবে। যদি কোষাগার শূন্য হয়ে যায়, তবে, কষ্টের জীবন সকলে মিলে ভাগ করে নেব।

৮) শাসকরা যখন বিগড়ে যায় তখন জনগনও বিগড়াতে শুরু করে। সর্বাপেক্ষা ইতর সে ব্যক্তি যার প্রভাবে তার অধীনস্থদের মধ্যে অনাচার বিস্তার লাভ করে।

৯) যে তোমার সামনে দোষ ধরে সেই প্রকৃত বন্ধু, আর যে সামনে প্রশংসা করে সেই শত্রু।

১০) যে আমার দোষ দেখে অনুগ্রহ করে তা আমাকে জানায় তাঁর প্রতি আল্লাহর করুণা অশেষ ধারায় বর্ষিত হোক।

উমর (রাঃ) এর শাসনের কিছু ঘটনা:
১) ইয়া সারিয়া! আল জাবাল। ইয়া সারিয়া! আল জাবাল। মসজিদে নববীতে জুমার খুৎবার অবস্থায় খলিফা উপর (রাঃ) হঠাৎ করে এরূপ অসংলগ্ন বাক্য উচ্চারণ করায় উপস্থিত সবাই অবাক বিস্মিত। খলিফা যথারীতি তাঁর খুৎবা পাঠ করতে থাকেন। ‘ইয়া সারিয়া! আল জাবাল- খুৎবার এ অপ্রাসঙ্গিক অংশটি যুগপৎভাবে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।

অন্যদিকে একই সময় ইরাকের দূরবর্তী স্থানে নেহাবন্দে যেখানে মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি সারিয়া অদৃশ্য কণ্ঠে রহস্যময় বাক্যটি নিজ কানে শ্রবণ করেন। দুইটি বাক্য কোথা থেকে কে উচ্চারণ করেছেন, এ কথা ভেবে তিনি রীতিমত হতভম্ব হয়ে পড়েন।

খুৎবার মাঝে হঠাৎ খলিফার অদ্ভুত বাক্র উচ্চারণ কেন, কারো সাহস হচ্ছে না খলিফাকে জিজ্ঞাসা করতে। খুৎবা ও নামাজ শেষে মসজিদে উপস্থিত অনেকের মধ্যে বিষয়টি গুঞ্জন করতে থাকে। হযরত ওমর (রাঃ) এর সাথে অন্তরঙ্গ ছিল হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) এর সাথে। খোলামেলা আলোচনা করতেন তিনি খলিফার সাথে। তিনি অসংকোচে খলিফাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আজ আপনি খুৎবার মধ্যে অসংলগ্ন ভাবে ইয়া সারিয়া! আল জাবাল (দুই কিংবা তিনবার) উচ্চারণ করলেন- কেন? জবাবে খলিফা একটি সৈন্য বাহিনীর কথা উল্লেখ করলেন। যারা নেহাবন্দে জিহাদে লিপ্ত, এ বাহিনীর সেনাপতি সারিয়া।

তিনি বলেন, আমি দেখেছি সারিয়া একটি পর্বতের পাশে লড়ছেন। অথচ, তিনি জানেন না যে, সম্মুখ এবং পেছন থেকে অগ্রসর হয়ে শত্রু বাহিনী তাকে ঘিরে ফেলার উপক্রম করেছে। এ শোচনীয় অবস্থা দেখে আমি বিচলিত হয়ে পড়ি, আমি স্থির থাকতে না পেরে আওয়াজ দিতে থাকি হে সারিয়া পর্বতের সাথে মিলে যাও। হে সারিয়া পর্বতের সাথে মিলে যাও।

নেহাবন্দের রণক্ষেত্র থেকে বেশকিছুদিন পর কাসেদ মদীনায় আগমন করেন এবং যুদ্ধের বিবরণ দিতে থাকেন এবং পূর্ণ ঘটনা ব্যক্ত করেন। কাসেদ জানান, আমরা যখন যদ্ধে লিপ্ত তখন হঠাৎ একটি অদৃশ্য কন্ঠ শোনা গেল, ইয়া সারিয়া! আল জাবাল। অওয়াজটি শ্রবণ করা মাত্র আমরা পর্বতের সাথে মিলে যাই এবং আমাদের বিজয় সূচিত হয়। ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী (রাঃ) তাঁর বিখ্যাত ‘তারিখুল খোলাফা’ গ্রন্থে ঘটনাটি বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন।

২) একদা দুর্ভিক্ষের সময় সর্বত্র খরা কবলিত মানুষের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। কোথাও বৃষ্টির নামগন্ধ নেই। হযরত উমর (রাঃ) এর আমল। তিনি দুর্ভিক্ষ ও খরা কবলিত দেশেল এ চরম সংকটময় অবস্থা দেখে পানির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন এবং বৃষ্টি হল, মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাঘব হতে লাগল।

কিছুদিন পর কতিপয় আরব বেদুইন লোক বাইর থেকে আসে এবং তারা আমীরুল মোমেনীনকে জানায় যে, তারা অমুক দিন অমুক জঙ্গলে ছিল। হঠাৎ আকাশে মেঘ দেখতে পায় এবং মেঘ হতে একটি আওয়াজ ভেসে আসে এবং আমরা শুনতে পাই ইন্নাকাল গাওসু আবা হাফছিন’ অর্থাৎ হে আবু হাফছ (উমরের কুনিয়াত ডাকনাম) আপনার জন্য বৃষ্টি নামছে।

৩) একটি পর্বতের গর্ত হতে অগ্নি নির্গত হত এবং এ আগুন যতটুকু বিস্তার লাভ করত সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিত। বহুকাল এ আগুনের ধ্বংসলীলা চলে আসছিল এবং খলিফা উমর (রাঃ) এর আমলেও তা অব্যাহত ছিল। তিনি খবর পেয়ে হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) অথবা হযরত তামীম দারীকে নির্দেশ দিলেন সেখানে গিয়ে  আগুনকে তার গর্তের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে এসো। নির্দেশ অনুযায়ী প্রেরিত সাহাবী সেখানে গমন করেন এবং আগুন তার চাদর দ্বারা হাকাতে শুরু করেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন গর্তের অভ্যন্তরে চলে যায় এবং আর কখনো প্রকাশ পায়নি। এটি ছিল খলিফার নির্দেশের অভূতপূর্ব ঘটনা।

৪) একদা এক আজমী অনারব ব্যক্তি মদীনায় আসে এবং ফারুকে আযম (রাঃ) এর খোঁজ খবর নিতে থাকে। কেউ বলে দেয় যে, তিনি হয়তো কোথাও জঙ্গলে শুয়ে আছেন। আগত লোকটি জঙ্গলের দিকে গিয়ে দেখতে পায় খলিফা তলোয়ারটি মস্তকের নিচে দিয়ে মাটিতে শুয়ে আছেন। সে মনে মনে ভাবতে থাকে এই লোকটির জন্য সারা দুনিয়ায় ফেতনা হচ্ছে তাকে হত্যা করাটা সহজ একথা ভেবে সে তরবারি বের করে। হঠাৎ দেখতে পায় দুটি সিংহ তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আজমী চিৎকার করতে থাকে। হযরত উমর (রাঃ) জাগ্রত হয়ে যান এবং আজমী পুরো ঘটনা বর্ণনা করে এবং সে সেখানেই মুসলমান হয়ে যায়।

৫) হযরত উমর (রাঃ) এর খেলাফত আমলে একবার ভূমিকম্প হয় এবং পুন: পুন: প্রকম্পিত হতে থাকে। হযরত উমর (রাঃ) আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করার পর জমিনে তার দোররা মারেন এবং বলেন স্থিত হয়ে যাও। আমি কি তোমার প্রতি ইনসাফ করিনি? একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্প বন্ধ হয়ে যায়।

হযরত উমর (রাঃ) এমন ব্যক্তি ছিলেন যাঁর ইচ্ছ অনুযায়ী আল্লাহ তা-আলা পবিত্র কুরআনের বিশটির অধিক আয়াত নাযিল করেছন তাঁর শান মান কত ঊর্ধ্বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

উমর (রাঃ) এর মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত:
আমর বিন মাইমুন (রাঃ) বলেন, যেদিন সকালে উমর (রাঃ) আহত হন, সেদিন সকালে আমি তার সাথে দাঁড়ানো ছিলাম। আমাদের দুজনের মাঝে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) ছিলেন। আর তখন ছিল ফজরের সময়। তিনি যখন নামাযের মুহূর্তে দুই কাতারের মাঝখান দিয়ে অতিক্রম করতেন, তখন তিনি মুসল্লিদের লক্ষ করে বলতেন, তোমরা কাতার সোজা করে দাঁড়াও তখন মুসল্লিগণ ঠিকভাবে কাতার সোজা করে দাঁড়াতো, এসময় তিনি লক্ষ করতেন যে কোন কাতারে খালি জায়গা আছে কিনা। যদি তিনি কাতারে খালি জায়গা দেখতে না পেতেন তখন তিনি মুসল্লিদের সামনে গিয়ে তাকবীর বলে নামায শুরু করতেন। আর তিনি অধিকাংশ সময় ফজরের নামাজের প্রথম রাকাতে সূরা “ইউসুফ” বা সূরা “নাহল” অথবা এজাতীয় অন্য কোন দীর্ঘ সূরা পড়তেন যাতে লোকজন সবাই জা’মাতে শামিল হতে পারে।

আমর বিন মাইমুন (রাঃ) বলেন সেদিন তাকবীর দিয়ে নামায শুরু করতেই আমি শুনলাম তিনি বলে উঠলেন, আমাকে কুকুরটি খেয়ে ফেললো বা মেরে ফেললো, কারণ! এসময় একটি কালো নিগ্রো কাফের উমর (রাঃ) কে দু’ধারী তরবারি দিয়ে আঘাত করে পালাতে লাগলো এবং আশে আশে যারই পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছে তাকেই আঘাত করেছে। এভাবে সে একে একে তির জনকে আহত করল। এর মধ্যে আঘাতপ্রাপ্ত সাত জনই মারা গেলেন। এই মুহূর্তে একজন মুসলমান লক্ষ করল যে, হত্যাকারী লোকটি পলায়ন করেছে, তখন তিনি কানটুপিওয়ালা একটি ভারী পোশাক তার দিকে ছুড়ে মারলেন। ফলে হত্যাকারী লোকটি মাটিতে পড়ে গেলো এবং সে বুঝতে পারল যে, সে ধরা পড়ে যাবে। তাই সে আত্মহত্যা করল।

এমন অবস্থায় হযরত উমর (রাঃ) আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) এর হাত ধরে নামাযের ইমামতির জন্য তাকে সামনে বাড়িয়ে দিলেন। তখনো আমি উমর (রাঃ) এর নিকটেই ছিলাম। ফলে আমি সব কিছুই লক্ষ করছিরাম এবং আমার আশপাশে যারা ছিল তারাও তা লক্ষ করলো। আর যারা মসজিদের প্রান্তে ছিল তারা কিছুই বুঝতে পারছিল না।

তবে, তারা এটুকু বুঝতে পারল যে তারা উমর (রাঃ) এর নামাযের কিরাত শুনতে পাচ্ছেনা। তাই তারা সুবহানাল্লাহ বলে তাকবীর দিতে লাগল। কিন্তু! ততক্ষণে আবদুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) সংক্ষিপ্তভাবে নামায শেষ করে দিলেন। যারা এঘটনা বুঝতে পারেনি তারা যার যার বাড়িতে চলে গেলেন। আর তাঁর কাছে ডানে বামে যারা ছিলেন তারা নামাযের পর উমর (রাঃ) এর সামনে জমায়েত হয়ে গেলেন।

তখন উমর (রাঃ) বললেন, হে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, তুমি দেখোতো কে আমাকে আঘাত করলো? তাই তিনি ঐ লোকটিকে দেখে এসে বললেন, মুগিরার নিগ্রো গোলামটি আপনাকে আঘাত করেছে। একথা শুনে উমর (রাঃ) বললেন সেই দক্ষ কারিগরটি নাকি? ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, সেই লোকটিই। তখন তিনি বলেন-আল্লাহ তাকে ধ্বংস করুন, তবে শোনো আমি তোমাদেরকে তার সাথে ভালো ব্যবহার করার আদেশ দিচ্ছি। কারণ! আমাকে তার সাথে ভাল ব্যবহার করার আদেশ দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি বললেন, সমস্ত প্রসংশা একমাত্র আল্লাহ তা-আলার জন্য। যিনি আমার মৃত্যু এমন একজন লোকের হাতে নির্ধারণ করেননি যে ব্যক্তি ইসলামের দাবীদার। কাফেরের হাতে মৃত্যু বরণ করা আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণের সমতুল্য।

হে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস! তবে আমার একটা জিনিসের জন্য আফসোস হয়। সেটা হলো তুমি ও তোমার পিতা মদীনায় নিগ্রো গোলামদের আধিক্য পছন্দ করতো। আর তিনি একথা বলার কারণ হল সাহাবায়ে কেরামেরও মাঝে হযরত আব্বাস (রাঃ) সবচে বেশি গোলামের অধিকারী ছিলেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ কথা শুনে হযরত উমর (রাঃ) কে বললেন, আমি সমস্ত গোলামকে হত্যা করে দিব। কিন্তু! উমর (রাঃ) বললেন, হে ইবনে আব্বাস! তুমি ভুল বললে। কারণ তারা তোমাদের ভাষায় কথা বলে, তাছাড়া তাদের মাঝে অনেকেই রয়েছে যারা তোমাদেরমত হজ্জ আদায় করে, তোমাদের কেবলার দিকে অভিমুখী হয়ে নামায আদায় করে। তাই কিভবে তাদেরকে হত্যা করা যেতে পারে?

আমর ইবনে মাইমুন (রাঃ) বলেন, এসমস্ত আলাপ আলোচনার পর উমর (রাঃ) কে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। সাথে আমরাও তার বাড়িতে গেলাম। হযরত উমর (রাঃ) এর বাড়িতে গিয়ে বললেন আমার মনে হচ্ছে ইতিপূর্বে মুসলমানেরা এধরণের বিপদের সম্মুক্ষিন হয়নি। কারণ!  তিনি গুরুতর আহত ছিলেন। যার কারণে সমস্ত মানুষ পেরেশান হয়ে পড়ল। তবে, তাদের মধ্য হতে একজন বলল, আমার মনে হচ্ছে তার কোন বিপদ হবে না, তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। একথা শুনে অন্য একজন বলল, আমার মনে হচ্ছে আমরা তার ব্যাপারে অশঙ্কা মুক্ত নই। কিছুক্ষণ পর পান করার জন্য তার সামনে শরবত নিয়ে আসা হলো, তিনি তা পান করলেন। কিন্তু! তা তার উদর থেকে বের হয়ে গেলো। আবার দুধ আনা হলো এবং তিনি তা পান করলেন তাও তার উদর থেকে বের হয়ে গেলো। ফলে লোকেরা বুঝতে পারলো তার মৃত্যু অবধারিত।

আমর বিন মাইমুন (রাঃ) বলেন, অতপর আমরা কয়েকজন তার সাথে একান্তে মিলিত হলাম এবং কিছুক্ষণ তার সাথে কথা বললাম তারপর আরো কিছু মানুষ উপস্থিত হলো এবং প্রশংসা করতে লাগল। তাদের মধ্যে একটি যুবক বলতে লাগলো, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কারণ! আপনিতো রাসূল (সাঃ) এর সান্নিধ্য লাভ করেছেন এবং আমার জানামতে আপনি সর্বাগ্রে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন। তারপর সাসূল (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর (হযরত আবু বকর (রাঃ) এন্তেকালের পর) আপনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন এবং ইনসাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারপর আপনি মৃত্যুর সময় আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত বরণ করতে যাচ্ছেন। একথা শুনার পর তিনি বললেন, আমি আশা করছি জীবনে আমি যা করেছি তা আমার জন্য যথেষ্ট হবে। আল্লাহর কাছে আমি তারই প্রতিদান কামনা করি। এ আলোচনা শেষ হওয়ার পর যুবকটি চলে যাচ্ছিল, ঠিক তখনি হযরত উমর (রাঃ) দেখলেন যে তার লিুঙ্গিটি মাটি স্পর্শ করছে,তখন তিনি বললেন হে ভাতিজা! তুমি তোমার কাপড় টাখনুর উপরে পরিধান কর। কেননা তা তোমার কাপড়ের জন্য অধিক পরিচ্ছন্নতাকর এবং আল্লাহর তাকওয়া অর্জনের ক্ষেত্রে বড় সহায়ক।

তারপর উমর (রাঃ) তার ছেলেকে বললেন, হে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর! তুমি দেখতো আমার কাছে মানুষের কত টাকা পাওনা আছে? তখন তিনি উপস্থিত সকলকে নিয়ে হিসাব করে দেখলেন প্রায় ছিয়াশি হাজার দিরহাম। তখন উমর (রাঃ) শুনে বললেন যদি আমার সম্পদ দ্বারা তা আদায় করা সম্ভব হয় তাহলে এই সম্পদ দ্বারাই তা আদায় করে দাও। আর যদি আমার সম্পদ এর জন্য যথেষ্ট না হয়, তাহলে আদি ইবনুল খিয়ার গোত্রের নিকট যাবে, তারপর যদি তাদের মাল দ্বারাও আদায় করা সম্ভব না হয় তাহলে কোরাইশদের থেকে সহযোগিতা নিবে। উল্লেখিত ব্যক্তিরা ব্যতিত অন্যের নিকট চাইবে না। বরং পরবর্ততে তুমি আমার পক্ষ থেকে তা আদায় করতে চেষ্টা করবে। আমি এটাই কামনা করি।

হে আমার বৎস! এখন তুমি আয়েশা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বল, উমর (রাঃ) আপনার কাছে সালাম পাঠিয়েছেন। তবে, তুমি আমীরুল মু’মিন বলবে না করণ এ অবস্থায় আমি রাষ্ট্রের দায়ীত্বের উপর বহাল থাকছিনা, কেননা আমার মৃত্যু অবধারিত। যাইহোক তুমি আয়েশা (রাঃ) কে বলবে যে, উমর তার সাথীদের সাথে দাফন হওয়ার অনুমতি চাচ্ছে। এরপর তিনি আয়েশা (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে সালাম জানালেন এবং তিনি ভিতরে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। তিনি ভিতরে প্রবেশ করে দেখলেন যে আযেশা (রাঃ) বসে বসে কাঁদছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) তাকে বললেন, আমার বাবা আপনার কাছে সালাম পাঠিয়েছেন এবং এই মর্মে আবেদন করেছেন যে, তিনি তার সাথীদ্বয়ের সাথে সমাহিত হওয়ার আশা রাখছেন। একথা শুনার পর তিনি বললেন, আমি এই স্থানটি আমার জন্য নির্বাচন করে ছিলাম। কিন্তু! আজ আমি তাকে আমার উপর প্রাধান্য দিলাম। তুমি নিশ্চিন্তে ফিরে যাও তার কথামত এখানেই তার সমাধি হবে। অতপর উমর (রাঃ) কে তার মৃত্যুর পর সেখানেই দাফন করা হয়।

Post a Comment

0 Comments